শুক্রবার, ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

বেড়া উপজেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য

উপজেলার নামকরণের পটভুমিঃ

বেড়ার ইতিহাসঃ
জনশ্রুতি আছে যে, আরবী ‘‘বেড়ুহা’’ শব্দের অপভ্রংশ হচ্ছে ‘বেড়া’। এর পূর্বনাম ছিলো শম্ভুপুর। খ্রীস্ট জন্মের পূর্ব হতে উত্তরবঙ্গের নদনদীর সঙ্গমস্থল হিসেবে শম্ভুপুর ব্যাপক পরিচিত ছিল। এই শম্ভুপুরে তাই গড়ে উঠেছিল জনবসতি। নৌপথে জলদস্যুদের আক্রমণ আর প্রমত্তা নদীর উত্তাল স্রোত পেরিয়ে বেড়ার নিকটবর্তী হলেই তারা নিজেদের নিরাপদ ভাবতো। একারণে বেড়া নিরাপদ পোতাশ্রয়ের উদাহরণ হয়ে দাঁড়ায়। যতদূর জানা যায় ৮০০ খ্রিস্টাব্দের গোড়ার দিকে আরব বণিকেরা বেড়াতে তাদের অন্যতম প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র গড়ে তোলে। আবার সুলতানী শাসনামলে একবার আরবদেশে ভয়ঙ্কর এক দুর্ভিক্ষ হয়। সেই দুর্ভিক্ষের সময় এই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল হতে খাদ্যশস্য সংগ্রহ করে বেড়া বন্দরের মাধ্যমে আরবদেশে পাঠানো হয়। ইংরেজ শাসনামলে জলদস্যু নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনিক থানা ‘মথুরা’ যমুনার করালগ্রাসে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেলে ১৮২৮ সালে যমুনার পশ্চিম উপকুলে বেড়া নামক স্থানে পুনঃস্থাপিত হয়। ১৯৬০ সালে বেড়া উন্নয়ন সার্কেল হিসেবে এর কার্য পরিধি অনেক বেড়ে যায়। ১৯৮৩ সালের ১৫ এপ্রিল বেড়া থানাকে উপজেলায় উন্নীত করা হয়।

প্রশাসনিক ইউনিটঃ
বেড়া উপজেলায় একটি পৌরসভা ও নয়টি ইউনিয়ন রয়েছে। বেড়া পৌরসভাটি প্রথম শ্রেণীর পৌরসভা। এছাড়া ইউনিয়নগুলি হচ্ছে-হাটুরিয়া-নাকালিয়া, কৈটোলা, চাকলা, নতুন ভারেঙ্গা, পুরান ভারেঙ্গা, জাতসাখিনী, রুপপুর, মাসুমদিয়া, ঢালারচর।বেড়া উপজেলার ভৌগোলিক অবস্থান লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, যমুনা নদী এবং পদ্মা নদী ঘিরে রেখেছে এই উপজেলাটিকে। ইতিহাস থেকে জানা যায় যে, বর্তমান বেড়া থেকে ৪ কিলোমিটার পূর্বেদিকে যমুনা নদীর উপকূলীয় এলাকায় সাধুগঞ্জ নামে একটি নদীবন্দর ছিল। ব্রিটিশ শাসনের প্রথমদিকে সাধুগঞ্জের নিকটে মথুরা’য় ছিল একটি প্রশাসনিক থানা। তখন বেড়া ছিল একটি চরভূমি। প্রমত্ত যমুনার প্রচন্ড স্রোতে সাধুগঞ্জ এবং মথুরা নদীভাঙনের শিকার হলে থানাটিকে তখন বেড়া’য় স্থানান্তর করা হয়।কারণ প্রচন্ড নদীস্রোত, প্রমত্তা ঢেউ আর জলদস্যুদের হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য সবাই বেড়াকে বেছে নিত। আরো একটি কথা জনশ্রুতি রয়েছে যে, পারস্য দেশের বণিকেরা এদেশে ব্যবসার জন্য এসেছিল। তাদের ভাষায় তারা ‘বেহড়া’ উচ্চারণ করত- যার বাংলা শব্দার্থ ‘নিরাপদ বন্দর’। তাদের উচ্চারণ অপভ্রংশ হয়ে ‘বেড়া’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। বেড়া থানাটি ব্রিটিশ শাসক ওয়ারেন হেস্টিংস এর আমলে ১৮২৮ সালে শুধুমাত্র জলদস্যুদের অপরাধ নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রতিষ্ঠিত হলেও পরবর্তীতে সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য অধিক দায়িত্ব প্রদানের মাধ্যমে মান উন্নীত করে বেড়া সার্কেল প্রতিষ্ঠা করা হয় ১৯৬০ সালে। পরবর্তীতে প্রশাসনিক সংস্কারের আওতায় বেড়া থানাতে উপজেলায় উন্নীত হয় ১৫এপ্রিল ১৯৮৩ সালে।

ভৌগোলিক অবস্থান
বেড়া উপজেলার উত্তরে সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলা ও চৌহালি উপজেলা, দক্ষিণে রাজবাড়ি জেলার গোয়ালন্দ ঘাট এবং রাজবাড়ি সদর উপজেলা, পূর্বে সিরাজগঞ্জের চৌহালি এবং মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর ও শিবালয় উপজেলা এবং পশ্চিমে পাবনা জেলার সুজানগর ও সাঁথিয়া উপজেলা।

দর্শনীয় স্থান
হুরাসাগর নদীতীরে বেড়া পোর্ট, কৈটোলা পাম্প হাউজ, বেড়া পাম্প হাউজ, বেড়াস্থ পানি উন্নয়ন বোর্ডের রেস্ট হাউজ, জেলা পরিষদ ডাকবাংলো

বেড়াস্থ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যসমূহের নাম ও পদবী
নাম
পদবী
পোঃ ঠিকানা
ফোন নমবর
মোঃ মোসতাফিজুর রহমান
চেয়ারম্যান
হাটুরিয়া-নাকালিয়া ইউপি
পোঃ নাকালিয়া; উপজেলাঃ বেড়া; জেলাঃ পাবনা।
০১৭১২-৫২৩৭০৭
মোঃ আমজাদ হোসেন
চেয়ারম্যান
নতুনভারেংগা ইউপি
পোঃ নতুনভারেংগা কোডঃ ৬৬৮৩ উপজেলাঃ বেড়া; জেলাঃ পাবনা।
০১৭১৪-২৫৫৭০০
মোঃ রেজাউল করিম
চেয়ারম্যান
চাকলা ইউপি
পোঃ পুনডুরিয়া কোডঃ ৬৬৮২ উপজেলাঃ বেড়া; জেলাঃ পাবনা।
০১৭১২-৫৭৬৭৫৪
মোঃ মহসীন উদ্দিন
চেয়ারম্যান
কৈটোলা ইউপি
পোঃ কৈটোলা কোডঃ৬৬৮১ উপজেলাঃ বেড়া; জেলাঃ পাবনা।
০১৭২১-২৫৮১২০
এম এ গণি ফকির
চেয়ারম্যান
জাতসাখিনী ইউপি
পোঃ রাজনারায়নপুর কোডঃ ৬৬৮৩ উপজেলাঃ বেড়া; জেলাঃ পাবনা।
০১৭১১-১২৮৩১৯
এ এম রফিক উল্লাহ
চেয়ারম্যান
পুরানভারেংগা ইউপি
পোঃ পুরানভারেংগা কোডঃ ৬৬৮২ উপজেলাঃ বেড়া; জেলাঃ পাবনা।
০১৭২৭-৩৪০৬৪৪
মোঃ শামসুর রহমান
চেয়ারম্যান
মাশুমদিয়া ইউপি
পোঃ মাশুমদিয়া বাজার কোডঃ ৬৬৬৮ উপজেলাঃ বেড়া; জেলাঃ পাবনা।
০১৭১১-৪৮৬৬১৬
মোঃ আকতারুজজামান
ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান
রুপপুর ইউপি
পোঃ খানপুরা; কোডঃ ৬৬৮৩ উপজেলাঃ বেড়া; জেলাঃ পাবনা।
০১৭১৪-৫৫৯০৫৯
মোঃ আতোয়ার রহমান টিপু
চেয়ারম্যান
ঢালারচর ইউপি
পোঃ ঢালারচর কোডঃ ৬৬৮২ উপজেলাঃ বেড়া; জেলাঃ পাবনা।
০১৭১১-০৪৪৭৩৫


এক নজরে বেড়া উপজেলা ও তার ইউনিয়নসমুহ
বেড়া উপজেলার মানচিত্র


এক নজরে বেড়া উপজেলা

উপজেলার নাম
বেড়া
আয়তন
২৪৮.৬০ ব.কি.মি।
জনসংখ্যা
২৩১,৪৩০ জন (২০০১ এর শুমারী অনুযায়ী)
পুরুষ ১২০,৬১৫ জন।
মহিলা ঃ ১১০,৮১৫ জন।
ঘনত্বঃ ৯৩১ জন প্রতি বর্গকিমিতে।
পৌরসভা :১ টি (প্রথম শ্রেণী)।
ইউনিয়ন : ৯ টি।
মৌজা
১৬১ টি ।
নির্বাচনী এলাকাঃ
দুটি (পাবনা -২ এর জন্য ৫টি ইউনিয়ন এবং বাকী
ইউনিয়ন ও পৌরসভা পাবনা-১ আসনের সাথে সম্পৃক্ত)
ভোটার সংখ্যা (ছবিসহ)
১,৪৯,৫৮৯ জন।
পুরুষঃ ৭৪,৪৫৯ জন;
মহিলাঃ ৭৫,১৩০ জন।
(হালনাগাদকৃত আরো ৩,৮৪৮ জন পুরুষ ও ৩,২০৭
জন মহিলা মোট ৭,০৫৫ জন ভোটার যুক্ত হবে)
সরকারী হাসপাতাল
১ টি (৩১ শয্যার)।
পোস্ট অফিস
১৩ টি।
নদনদী
পদ্মা, যমুনা, ইছামতি, হুরাসাগর।
হাটবাজার
১৭ টি।
ব্যাংক
১০ টি।
এনজিও
৩০ টি।
ইউনিয়ন ভুমি অফিস
৭ টি।
রেস্ট হাউজ
২ টি ।
ডাকবাংলো
১টি।
সরকারী/রেজিঃ প্রাথঃ বিদ্যালয়
১০৭ টি।
কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়
০২ টি।
কিন্ডারগার্টেন
১৬ টি।
এবতেদায়ী মাদ্রাসা
৪ টি।
মাধ্যমিক স্কুল
১৮ টি।
মাদ্রাসা
৭ টি (আলীম মাদ্রাসাঃ ২টি )।
কলেজ
৪ টি।
ডিগ্রি কলেজ
২ টি।
কারিগরী কলেজ
১ টি।
সাক্ষরতার হার
৩.৫৪% (পুরুষ ৩৮.০৯%,
মহিলা ২৮.০৬% )
পাবলিক লাইব্রেরী
৪ টি।
মসজিদঃ ১৫৫টি মন্দির
৪৪ টি।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন
বধ্যভূমি চরপাড়া এবং দয়ালনগর
, নগরবাড়ীঘাট।
মোট খাস জমির পরিমান
১২৩১.৭১ একর।
বন্দোবস্তকৃত খাসজমি
৯৯৬.৯৮ একর।
বন্দোবস্ত যোগ্য খাসজমি
২৩৪.৭৪ একর।
উপকারভোগীর সংখ্যা
৩৬০ জন।
আদর্শগ্রাম
৩ টি ।
১. দয়ালনগর আদর্শ গ্রাম।
২. কল্যাণপুর আদর্শ গ্রাম ।
৩. নতুন মাছখালী আদর্শ গ্রাম।
জলমহাল
( ২০ একরের নিচে) ৭টি ;
( ২০ একরের উর্ধ্বে) ৫টি।
মোট রাস্ত
৩৩৪ কিঃ মিঃ।
২৪৮ কিঃ মিঃ।
পাকা রাস্তা-৮৬ কিঃ মিঃ ; কাচা রাস্তা
উপজেলা সড়ক
০৬ টি।
ইউনিয়ন সড়ক
১৩ টি।
গ্রামীন সড়ক- এ
৯০ টি।
গ্রামীন সড়ক বি
৭৮ টি।
মোট চাষযোগ্য জমি
১৫,২৭০ হেক্টর।
সেচ এলাকা
৫,৭০০ হেক্টর।
একফসলী জমি
৪২৭০ হেক্টর।
দোফসলী জমি
৯০০০ হেক্টর।
ত্রিফসলী জমি
২০০০ হেক্টর।
নেট শস্য এলাকা
১৭,২৭০ হেক্টর।
মোট শস্য উৎপাদন এলাকা
২৮,২৭০ কিমি।
মোট কৃষক
৪০,০০০।
প্রধান উৎপাদিত ফসল
ধান, পাট, সড়িষা, মাসকলাই আর চর এলাকায় বাদাম, তৈলবীজ।
ইটভাটা
৭ টি।
বরফকল
৫ টি।
রাইসমিল
৬ টি।
স মিল
৮২ টি।
তেল মিল
১০ টি ।
আটা মিল
১০ টি ।
তাঁত শিল্প
আনুমানিক ৫০০ টি ।
রেজিস্টার্ড গাভীর খামার
৭৮৭ টি।
পোল্ট্রি খামার
৭২ টি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন